মনুস্মৃতি অধ্যায় এক শ্লোক সংখ্যা ৩ থেকে ৬
অনুবাদ:
হে প্রভু, ব্রহ্মের সকল অচিন্তনীয় ও অপরিমেয় বিধানের কার্য ও তত্ত্ব সম্বন্ধে একমাত্র আপনিই জানেন। অপরিমিত তেজ সম্পন্ন মহাত্মা মনু সেই সকল মহর্ষি গণের নিকট সম্যক ভাবে জিজ্ঞাসিত হয়ে তাঁদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে বললেন, "তবে শুনুন: “এই জগৎ একসময় অজ্ঞাত, চিহ্ন বা লক্ষণ হীন, যুক্তির দ্বারা অনুধাবন যোগ্য নয় এমন একটি ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল। সব কিছু যেন নিদ্রিত অবস্থায় ছিল। তখন তমস্ দূরকারী, সয়ম্ভু ভগবান, ইন্দ্রিয়ের অগোচর, অপ্রকাশিত, ইন্দ্রিয় অগোচর মহাভূত (পঞ্চভূত) প্রভৃতি বৃত্তিত সকল প্রকট করে অর্থাৎ বিশ্ব-উপাদান গুলো প্রকাশ করতে করতে, আবির্ভূত হলেন।
ব্যাখ্যা:
মনু সহ অন্যান্য মহান ঋষিরা ব্রহ্মার পুত্র, তবু মনুকে অপরিমিত তেজ সম্পন্ন মহাত্মা বলা হয়েছে। এর দ্বারা আমরা জানতে পারি মনু আসলে ব্রহ্মারই অবতার ছিলেন। তিনি মুনিদের দ্বারা জিজ্ঞাসিত হয়ে মহর্ষিদের কেও সংবর্ধনা জ্ঞাপন করলেন এবং সৃষ্টির আদিতে এই জগত কি অবস্থায় ছিলো, তা বলতে শুরু করলেন।
তাঁর ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পেরেছি, এই জগৎ একসময় অজ্ঞেয়, চিহ্নহীন, যুক্তির দ্বারা বিচারযোগ্য নয় এমন একটি অবস্থায় ছিলো। অর্থাৎ, এই জগত আদিতে একেবারেই শূন্য থেকে শুরু হয়নি। এই জগত "প্রসুপ্তম এব সর্বতঃ" অর্থাৎ সম্পূর্ণ রূপে নিদ্রামগ্ন ছিলো। যাহাকে "তম বা অন্ধকার" বলা হয়েছে। সেই অন্ধকারে স্বয়ম্ভু পরমেশ্বর ইন্দ্রিয় অগোচর মহাভূতাদি বিশ্ব-উপাদান প্রকট করে নিজেকে প্রকট করলেন। অর্থাৎ সাক্ষী রূপে তিনিই প্রথমে প্রকট হলেন।
লক্ষ্য করুন, বলা হয়েছে, ইন্দ্রিয় অগোচর মহাভূতাদি বিশ্ব-উপাদান প্রকট করে নিজেকে প্রকট করলেন। অর্থাৎ এই জগতের যে প্রথম সাক্ষী তিনি একই সঙ্গে কর্ম, কারক এবং কারণ।
আজকের বিজ্ঞান space, time, matter, energy-কে প্রাথমিক উপাদান ধরে কাজ করে। কিন্তু তার আগে কোনো “সত্তা” বা “রিয়েলিটি” ছিল কি না, তা বলতে পারে না। যেমন:
- বিজ্ঞান বলে না “কেন” কিছু সৃষ্টি হলো।
- বিজ্ঞান বলে “কিভাবে” কিছু ঘটলো।
- বিজ্ঞান বলতে পারে না “কেন শূন্যতা থেকেও কিছু হলো?”
এ কারণেই বিজ্ঞানীরা বলেন — বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল, সেটা বিজ্ঞান এখনও জানে না। স্টিফেন হকিং এর Theory Of Everything মানুষের এখনো অজানা। হয়তো সেখানে আমাদের physics কাজই করে না। স্টিফেন হকিং বলেগেছেন
Asking what happened before the Big Bang is like asking what is north of the North Pole.
— অর্থাৎ সময়-স্থান নিজেই শুরু হয়েছে সেখানে, আগে কিছু ছিল — এই ধারণা বিজ্ঞান দিতে পারে না।
যেখানে ভৌতত বিজ্ঞান শেষ হয় আধ্যাত্ম সেখান থেকে আরম্ভ হয়।
যে উপকরণ space, time, matter, energy দিয়ে আমরা ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি আলোচনা করছি। সেই সব কিছুই ভৌতিক। এটি অনেকটা গাধার সামনে গাঁজর ঝুলিয়ে গাধাকে কাজে লাগানোর মতো চালাকি।
Comments
Post a Comment